![]() |
নগরের আলো-আঁধারে |
প্রথম অধ্যায়: নতুন শুরু
লিটন ও শিলা দম্পতি ঢাকার একটি ছোট্ট বস্তিতে থাকতেন। গ্রামের জমি হারিয়ে তারা শহরে এসেছিলেন আশার বীজ নিয়ে। লিটন দিনে রিকশা চালাতেন, আর শিলা একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তাদের ছেলে সাদিক ও মেয়ে বর্ষা একটি সরকারি স্কুলে পড়ে। সকালবেলা রিকশার হর্ণ, ফ্যাক্টরির সাইরেন আর স্কুলের ঘণ্টার শব্দে তাদের দিন শুরু হতো। সন্ধ্যায় চারজন মিলে টিনের ছাউনির নিচে গল্প করতেন—সাদিকের স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, আর বর্ষা চাইতো ডাক্তার হয়ে শহরের সুবিধাবঞ্চিতদের চিকিৎসা দিতে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: অদৃশ্য যুদ্ধ
শহরের জীবন সহজ ছিল না। এক দিন লিটনের রিকশা দুর্ঘটনায়, হাসপাতালের বিল শোধ করতে শিলার গহনা বিক্রি করতে হলো। বর্ষা স্কুলের ফি জমা দিতে পারছিল না, আর সাদিক রাত জেগে ফুটপাথে মোবাইল ফোন রিপেয়ার শিখত—টিউশনির টাকায় বই কিনতে। এক শীতের রাতে শিলার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো কারখানার ধুলো থেকে, তবু লিটন বলতেন, "যুদ্ধ করতেই হবে, পিছু হটলে গ্রামে ফেরার পথও নেই।"
তৃতীয় অধ্যায়: অপ্রত্যাশিত বন্ধু
একদিন সাদিক একটি মোবাইল দোকানে কাজ পেল। দোকানের মালিক রফিক ভাই, যিনি নিজেও একদিন বস্তির ছেলে ছিলেন, সাদিকের মেধা দেখে তাকে প্রোগ্রামিং শেখালেন। বর্ষা এক এনজিওর সাথে যুক্ত হয়ে গরিব শিশুদের বিনামূল্যে পড়াত। এক বসন্তে, শিলার স্বাস্থ্য আবারও ভেঙে পড়ল—এবার বর্ষা নিজেই মায়ের জন্য ওষুধ জোগাড় করতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরল, আর সাদিক রাত জেগে কোডিং করে একটি অ্যাপ তৈরি করল যা রিকশাচালকদের নিরাপদ রুট দেখায়।
চতুর্থ অধ্যায়: জয়ের গান
দুই বছর পর। সাদিকের তৈরি অ্যাপটি সিটি কর্পোরেশন চালু করল—তার নাম হলো "রিকশা-সাথী"। প্রথম আয়ের টাকা দিয়ে সে বাবার জন্য নতুন ইলেকট্রিক রিকশা কিনল। বর্ষা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে, সাপ্তাহিক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প চালায় বস্তিতে। শিলা এখন ছোট্ট একটি সেলাইয়ের দোকান খুলেছেন, "শিলার সূচিকর্ম" নামে শহুরে নারীদের পছন্দের ব্র্যান্ড। লিটন বলতেন, "শহর কেড়ে নেয় অনেক, কিন্তু যারা লড়াই শেখে, তাদের হাতেই আলো থাকে।"
শেষ অধ্যায়: উৎসবের রাত
ঢাকার শীতকালীন বইমেলায় একসাথে হাঁটছিল। সাদিকের অ্যাপ নিয়ে নিউজে প্রতিবেদন হচ্ছে, বর্ষা মঞ্চে বলছে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। লিটন ও শিলা পেছনে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছেন। রাতের নেগুন আলোয় শহর যেন তাদেরই জয়গান গাইছিল। বস্তির টিনের ঘরে ফেরার পথে বর্ষা বলল, "আমাদের গল্পটা যেন পুরান ঢাকার সেই লালমাটির গলি—অভিমানেও প্রাণে ভরা।" সাদিক হাসল, "আর এই প্রাণই তো আমাদের 'হোম'।"
গল্পের সারমর্ম
এই গল্প শহরের কোলাহলেও মায়া-মমতার। যেখানে দারিদ্র্য আর স্বপ্ন পাশাপাশি বাস করে, যেখানে একটি পরিবারের সংগ্রাম শুধু টিকে থাকার নয়, বদলে দেওয়ার। ঢাকার রিকশা, গার্মেন্টস কর্মী, কোডিংয়ের যুগ—সব মিলিয়ে এ গল্প আধুনিক বাংলাদেশের এক প্রতিচ্ছবি।
0 মন্তব্যসমূহ